আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।যা “বন সংরক্ষণ ও বন ব্যবস্থাপনা” এর অন্তর্ভুক্ত।
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮০-৮৫) শেষে দেখা যাচ্ছে ৭২০০ একর সরকারি বাস জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। এই কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনসাধরণ অংশগ্রহণ করেনি। মহাসড়ক, সড়ক ও রেল সড়কে বনায়ন পরিকল্পনা স্থানীয় জনগণের অসহযোগিতার কারণে আংশিক ব্যর্থ হয়েছে। ফলে পরিকল্পিত ১৩৬১ মাইলের মধ্যে ১১৭৪ মাইলে বন সৃজন সম্ভব হয়েছে।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের পল্লী বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা গৃহীত হয়। লক্ষ্য ছিলো ৩০,০০০ একর সরকারি নিচু জমিতে বনায়ন করে খুঁটি, আসবাব, জ্বালানি ও পশুখাদ্যের অভাব মেটানো হবে। এছাড়া বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, রেলপথ ও সমুদ্রোপকূলে ১২৮০ কি. মি. বন সৃষ্টি করা হবে।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য গ্রাম পর্যায়ে ৩৬০০ ব্যক্তিগত চারা উৎপাদনকারীকে প্রশিক্ষণ দান করা হবে। এরা নার্সারি গড়ে তুলবে। এ সকল নাগরি বছরে ১৫২০০০ চারা উৎপাদন করবে।
সরকারি নিচু অঞ্চলে বনাঞ্চল, সড়ক ও অন্যান্য স্থানে বনায়নের কাজে দৈনিক মজুরি প্রদানের ভিত্তিতে স্থানীয় দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। এদেরকে বনাঞ্চলে অন্যান্য ফসল উৎপাদন করার জন্য ও গোচারণ বা পশুচারণের অধিকার প্রদান করা হবে। এই বনের উৎপাদন থেকে লভ্য অর্থ বনায়নের সঙ্গে সম্পর্কে জনগণ, সরকার ও বনবিভাগের মধ্যে বন্টন করা হবে।
আলোচ্য পরিকল্পনায় গাছপালাহীন সরকারি বনাঞ্চল ও নুতন উদ্ধারকৃত জমিতে বনায়নের জন্যেও অপর একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের জমিসহ উচ্চারণত ৮৫০০০ একর জমিকে বনায়নের জাওতাধীনে আনা হবে। এ ছাড়া, অশ্রেণিভূক্ত সরকারি ২৬১০০০ একর জমিতে বনায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এর মধ্যে সদ্য জেগে ওঠা সমুদ্রোপকূলীয় চরও অন্তভুক্ত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণদানের পরিকল্পনাও গৃহীত হয়। প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচিতে ছিলো বনায়ন সম্প্রসারণ পদ্ধতি, যোগাযোগ পদ্ধতি, শিক্ষাদান কৌশল ও প্রমিত মাঠ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি।
সারা দেশকে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় আনার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। পরীর জনসাধারণের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার দুই পর্যায়ে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন স্থির ছিলো—(১) সরকারি বনাঞ্চল ও জনসাধারণের জমির উপর সামাজিক বনায়ন এবং (২) ব্যক্তিগত জমি বা বসতভিটেয় সামাজিক বনায়ন। কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বন বিভাগ ও বন সম্প্রসারণ বিভাগ।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি বিষয়ে যেটুকু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গৃহীত পরিকল্পনার এক তৃতীয়াংশ সাফল্য অর্জিত হয় নি।
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হয়েছিলো বলে জানা যায়। কিন্তু এটি প্রকাশিত হয়নি। কাজেই পরিকল্পনার অধিকাঠামো বিষয়ে কিছু জানানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সরকারের ফরেস্টি মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ১৯৯৪ সালে বন পরিকল্পনা প্রগীত হয়। লক্ষ্য, উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষণ ও এর উন্নয়ন বনসম্পদ বৃদ্ধি ও জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ধনায়ন ও পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।
এডিবি ও নোরাজের সহযোগিতায় সরকার ১৯৯৪-৯৫ থেকে ১৯৯৮ ৯৯ পর্যন্ত মেয়াদি এই পরিকল্পনা হাতে নেন। এতে প্রাথমিক নাম ধরা হয় ১২৩ কোটি। ১০টি জেলা এই প্রকল্পের অধীনে নেওয়া হয়। জেলাসমূহ হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও বাগেরহাট।
এ সকল জেলায় ১০০০ কিলোমিটার বাধ, ১০০ কিলোমিটার রাস্তা, ২৭০০ কিলোমিটার প্রধান সড়ক ও ৩০০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক বনায়ন করা হবে। এ ছাড়া বসতভিটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আশ্রয়কেন্দ্র, সরকারি অফিস-প্রাক্ষণ ইত্যাদিতে রোপণের জন্য ২,৮০,০০,০০০ চারা বিতরণ করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১০ জেলার ১৬,০০,০০০ হেক্টর জমি বনায়নের আওতাভুক্ত হবে। সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারীরা গাছ বিক্রির ৫০% লভ্যাংশ পাবেন। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ভূমির মালিক ১৫%, বনবিভাগ ২০২ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ১৫% লভ্যাংশ পাবেন। চুক্তি হবে বছরভিত্তিক। প্রয়োজনে বনবিভাগ চুক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে।
আরও দেখুনঃ