আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-নগর বনায়ন বা স্বনির্ভর বনায়ন।যা “সামাজিক বনায়ন” এর অন্তর্ভুক্ত।
নগর বনায়ন বা স্বনির্ভর বনায়ন
নগর বা মহানগরে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে, প্রাণভরে বিশুদ্ধ সুবাতাস পেতে হলে এখানে বনসৃজন অতি জরুরি। বাংলাদেশের মহানগর ঢাকায় এক সময় প্রায় সব জায়গায় শ্যামলী নিসর্গে ভরপুর ছিলো। সেই মহানগরে আজকাল বৃক্ষের সংখ্যা এতোই কমে গেছে যে একে রুক্ষ নগরী মনে হয়।
নূতন এলাকায় গড়ে ওঠা শহরের অবস্থা আরো করুণ। ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য নগরের অবস্থাও তাই। অট্টালিকার পর অট্টালিকায় সর্বত্র ছেয়ে গেছে। যেটুকু ফাঁকা তাতে বৃক্ষরোপণের সুবিধে নেই। রোপণ করা হলেও তা বৃদ্ধির উপায় নেই। অট্টালিকা ওসব গাছে সূর্যের রশ্মি পড়ায় বাধার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মাটির নিচে শিকড়ের অগ্রগমনেও তা প্রতিবন্ধক হয়।
নগর, মহানগর থেকে কেবল বৃক্ষই লোপাট হয়নি, ছোট বড় জলাশয়গুলোও বিলীন করা হয়েছে। ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধির সুযোগও বিশেষ নেই। নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রাঙ্গণ, বাড়ির আভিনার অব্যবহৃত জমি, সড়কের পাশের জমি, ট্রাফিক পয়েন্ট ও পাকা বাড়ির ছাদে বৃক্ষরোপণ করা অতি আবশ্যকীয় কর্মসূচি হওয়া এ মুহূর্তের দাবি হিসেবে গণ্য করা উচিত।
তবে নগরে সাধারণত দৃষ্টিনন্দন, বাহারি গাছ ও সুবাস ছড়ায় এমন গাছ লাগানোর ঝোঁক বেশি হওয়াই সঙ্গত। হোক না বাহারি গাছ তাতেও অনেকটা কাজ হবে। ফ্যাক্টরি ও মোটর ইঞ্জিন নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডকে গাছ টেনে নিয়ে অক্সিজেন উপহার দেবে। পাতা কাও ধুলোবালি আটকাবে। বাতাস বিশুদ্ধ হবে।
তবে এই বনায়ন সৃজনে মুখ্যত নগরের অট্টালিকার মালিক বা ভাড়াটেদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে সরকারের ভূমিকা গৌণ। সরকারের এখন থেকে বাড়ির প্ল্যান পাশ করার সময় বা হাউজিংয়ের আদেশ দেবার সময় বনায়নের আবশ্যকীয় শর্ত আরোপ করতে পারেন।
নগরের পার্ক গুলোতে পরিকল্পিতভাবে উদ্ভিদ লাগানো, পরিচর্যা ও নজরদারির ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে নগরবাসী বিনোদনের সুযোগ পাবে এবং নানান উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পাবে। বিশেষ করে নগরে নবপ্রজন্মের শিশু-কিশোররা এতে উপকৃত হবে। বৃক্ষ সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ তো করবেই সেসঙ্গে কলকারখানা ও যানবাহনের রাসায়নিক ধোয়ায় দুষিত বায়ুকে দূষণমুক্ত করবে।
নগরে ও নগরের আশেপাশে স্থিত কলকারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিতে হবে। এতে নগরবাসী কলকারখানাজাত শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের করাল গ্রাস থেকে রেহাই পাবে। এ সকল বৃক্ষ পাখি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গের আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিগণিত হবে। অবশেষে এই বৃক্ষ থেকে পাওয়া যাবে মূল্যবান কাঠ, জ্বালানি কাঠ, পশু খাদ্য ও ফুল-ফল।
আরও দেখুনঃ