আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-জনগণ ও সরকারের ভূমিকা।যা “বন সংরক্ষণ ও বন ব্যবস্থাপনা” এর অন্তর্ভুক্ত।
জনগণ ও সরকারের ভূমিকা
বন বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসা দায়িত্ব পালনে অপারগতার সুযোগে স্বার্থান্বেধীমহল বন লোপাট করতে সক্ষম হয়েছে ও হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় উত্তরাধিকারসূত্রে বসবাসকারী স্থায়ী বাসিন্দারা অশ্রেণিভু কাটার পারমিট বা অনুমতিপত্র নেয়।
পারমিট ইস্যু করেন জেলা প্রশাসন। দেখা যায়। পারমিটধারীর জোতে ১০/১৫টি গাছ থাকলেও সে ব্যক্তি বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাহায্যে শত শত গাছের পারমিট ইস্যু করিয়ে নেয়। জোত পারমিটে গাছের সংখ্যা, কাঠের পরিমাণ ও কাঠ স্থানান্তরে নেবার অনুমতি ইত্যাদির উল্লেখ থাকে।
সংশ্লিষ্ট পারমিট শিকারি নিজে বা তার পক্ষের কাঠ ব্যবসায়ী সরকারি শ্রেণিভূক্ত বনাঞ্চল থেকেই মূলত কাঠ সংগ্রহ করে। এ কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকেও সন্তুষ্ট রাখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলে বসবাসকারীরা ছোট ছোট জোতের মালিক হলেও, সরকারি কাঠ আত্মসাতের মাধ্যমে মুনাফা লুঠেরা বড় বড় চক্রগুলো উপরিলিখিত ছোট জোত মালিককে অর্থের বিনিময়ে হাত করে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে পারমিটের বদৌলতে সরকারি বন নির্বিচারে কাটা পড়ছে।
শাল প্রধান অঞ্চলের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বসতভিটে ও ক্ষেতখামার। সাবেক পাকিস্তান আমলে এই বন ছিলো জমিদারের দখলে। জমিদারি স্বর লোপ ঘোষণার ঠিক আগে এরা জমিদারদের কাছ থেকে খণ্ড খণ্ড জমির পত্তন নেয়। ভুয়া পত্তন গ্রহণকারীর সংখ্যাও কম নয়।
এরা ক্রমে ওদের অধিকৃত ভূমির সীমানা বাড়াতে থাকে। ফলে শালবন প্রায় ধ্বংসের পর্যায়ে। এ ছাড়া ভূমি প্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে অনেকে অনেক ভুয়া দলিল করে বনাঞ্চল হ্রাস করে বলে যায়।
সুন্দরবনের আশেপাশের অধিবাসীরা নিজেদের ব্যবহারের প্রয়োজনে ও বিক্রির জন্য ন থেকে ব্যাপকহারে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করে। এখানে এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রশ্রয় রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
বন সংরক্ষণের সার্বিক দায়িত্ব সরকারের। সরকার উপরিবর্ণিত বিষয়ে জোর খবরদারি না চালালে এ প্রকৃত সত্য উদ্ধারে আন্তরিক না হলে এই মূল সমস্যার সমাধান হবে না। এক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা রয়েছে আরো বেশি। জনগণ যদি সচেতন হতো তাহলে মুষ্টিমেয় চোরা কারবারি খামোশ হয়ে যেতো।
জনগণকে নানাভাবে এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য সরকারকে নানান কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বনাঞ্চলে গোচারণ, জুমচাষ ইত্যাদি ব্যাপারেও জনগণ সরকারকে সাহায্য করতে পারে। জনগণকে সামাজিক বনায়ন কর্মকাণ্ডে বাপেকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলে জনগণের মধ্যে সচেতনতাও যেমন বাড়বে বন সৃজন ও তেমন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে আশা করা যায়।
আরও দেখুনঃ